বিস্তারিত উত্তর


ইসলামি আন্দোলন না করলে কি গুনাহ হবে?

প্রশ্নকারীঃ সালমান তারেক

ইসলামী আন্দোলন মানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ইসলাম প্রতিষ্ঠা মানে আকাশ ও পৃথিবীর যিনি স্রষ্টা, জগতের সব কিছুর যিনি স্রষ্টা, সেই আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত জীবন বিধান সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা। কুরআনের ভাষায় এর নাম- আকীমুদ দ্বীন। সৃষ্টির শুরু থেকে যত নবী রসূল এসেছেন সকলকে প্রেরণের একটাই উদ্দেশ্য- বিরাজমান সকল সিস্টেমের উপর আল্লাহর প্রভুত্বকে বিজয়ী করা। কুরআনের পাতায় পাতায় আপনি নবী রসূলদের জীবনী পড়ে দেখুন, প্রত্যেক নবী দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তার জাতিকে ডেকে একই কথা বলেছেন- হে আমার জাতি, সকল কিছুর ওপর তোমরা এক আল্লাহর আনুগত্য-দাসত্ব মেনে নাও।

আর সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ স. সম্পর্কে তো আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় কুরআনে বলে দিয়েছেন- "তিনি আল্লাহ্ যিনি তাঁর রাসূল (সঃ) কে হেদায়েত এবং দ্বীনে হক দিয়ে এই জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন যেন রাসূল (সঃ) আল্লাহর আইন বিধানকে দুনিয়ার সকল মতবাদ ও আইন বিধানের উপর বিজয়ী করেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।" [তাওবা-৩৩] যে মৌলিক কথাটির ভিত্তিতে আজ আমরা মুসলমান তার দিকে একবার লক্ষ্য করে দেখেছেন কি? “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” – আল্লাহ ছাড়া কোন বিধানদাতা নেই। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর এখতিয়ারই রয়েছে আইন প্রণয়ন করার। আর এখানেই লুকিয়ে রয়েছে মুসলমানদের কর্মপন্থা।

সকল তাগুতকে অস্বীকার করে এক আল্লাহর আইনকেই মেনে নিতে হবে এবং পৃথিবীর বুকে বাস্তবায়নের সকল বৈধপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এর সমর্থনে কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন “তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? বিশ্বাসী কওমের জন্য আল্লাহর আইন ও শাষনের চেয়ে কার আইন ও শাষন উত্তম হতে পারে?” [মায়েদাঃ ৫০]। এ রকম অসংখ্য আয়াত আছে কোরআনে। “জেনে রাখ সৃষ্টি যার, নির্দেশ তারই” [আরাফঃ ৫৪] সুতরাং ইসলামী আন্দোলন ফরজ কি ওয়াজীব, তার চেয়েও বড় হল- মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে ইসলামী আন্দোলন তথা দ্বীন বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে। সুতরাং মানুষের সকল কার্যক্রম এই উদ্দেশ্যকে ঘিরেই আবর্তিত হতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম বললেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে রকেট লাঞ্চার পিঠে একদল কাবুলী পরিহিত যোদ্ধা অথবা গাট্টি বোচকা পিঠে টুপি মাথায় একদল সংসারত্যাগী মানুষের নিরব পদযাত্রা। বস্তুত আন্দোলন কি সংগ্রাম শব্দের ব্যাপ্তি অনেক বড়। রাষ্ট্র গঠনে সিনেমা হল যেমন জরুরী, সেনাবহিনীর ব্যারাকও তেমনি জরুরী, অথবা স্টেডিয়ামও সমানভাবে জরুরী।

সেই ধারাবাহিকতায় সংসার সমাজ সংস্কৃতি সাহিত্য চিন্তা-চেতনা গবেষণা কিংবা আইন আদালত সংসদ- সকল কার্যক্রমকে স্রষ্টার নির্দেশনার রঙে রঙিন করার নামই ইসলামী আন্দোলন বা দ্বীন কায়েম। আর যেহেতু সমাজ-সভ্যতার ড্রাইভিং সিটে বসা থাকে রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সরকার, তাই সরকার ব্যবস্থায় আল্লাহর দ্বীনের রঙে রঞ্জিত একদল মানুষ অধিষ্ঠিত হলেই সমাজ সভ্যতার বাকি অংশে খুব সহজেই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা যায়।