প্রথম দাওয়াত

লেখক: মেহেদি হাসান মাজিদ

আমার ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি খুব ঝোক ছিলো,আগে কওমি মাদ্রাসায় পড়তাম, তখন মাসিক আদর্শনারী রেগুলার পড়তাম। পাশাপাশি আলিয়াতেও ভর্তি হই,সুধু পরিক্ষা দেওয়ার জন্য। ২০১০সালে আমি মাদ্রাসা থেকে জে ডি সি পরিক্ষা দিই। যেদিন প্রথম পরিক্ষা দিতে যাই,কেন্দ্রের বাহিরে দেখলাম দুটো ছেলে বই বিক্রি করছে,তো বইয়ের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ থাকাতে এগিয়ে গেলাম,দেখলাম তারা কিশোরকণ্ঠ বিক্রি করছে,৮টাকা দাম ছিলো,১টি নিলাম। 

যার কাছ থেকে বই কিনেছিলাম, তার নাম ফারুক,তখন তিনিও ৮ম শ্রেণীতে পড়তো,একটা কথা বলে নেওয়া ভালো,আমি কিন্তু আগে শিবিরকে ঘৃণা করতাম,এবং আমার এক হুজুরের প্ররোচনায় একবার জামাতের কিছু বই ছিড়ে মসজিদের সামনের পুকুরে ফেলে দিয়েছিলাম, তাও আমার ঐ হুজুরের সামনে, যাইহোক, সেখান থেকে ফারুক ভাই আমাকে টার্গেট করে, এবং পরিক্ষার পর, আমি ক্রিকেট খেলছিলাম,এমন সময় ফারুক ভাই আমার সাথে দেখা করার জন্য আসে, একপর্যায় কথা বলার শেষে আমাকে নামাজের কথা বলে,আর আমি লজ্জাবোধ করি,আমি মাদ্রাসায় পড়েও নামজ না পড়ে খেলতেছি।

তিনি আমাকে নামাজের দাওয়াত দিলেন, এবং নামাজের পর কিছু কুরআন হাদিসের কথা বললেন, তার মুখে কুরআন হাদিসের কথা শুনে আমি অভিভূত হতে থাকলাম। আমি ভাবতে লাগলাম, আমার ক্লাসের একটা ছেলে এতো সুন্দর কথা বলছে,আর আমি কওমি মাদ্রাসায় পড়েও এতো কিছু জানি না, যা সে আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ে জানে। তিনি সেদিন আমাকে দুইটি বই দিয়ে বলে গেলেন,এ দুটো পড়া শেষ করে তাকে ফোন দিতে,আমি একদিনেই দুটো বই পড়ে শেষ করে ফেললাম। তখনো আমি জানতাম না তিনি শিবির করেন,তবে তাকে আমার ভালো লাগতো।

পরেরদিন আমি তাকে ফোন দিয়ে বললাম ভাই বই দুটো পড়া শেষ, তিনি আমাকে বললেন আগামী শুক্রবার বই দুটো নিয়ে অমুক জায়গায় আসবেন, আপনার দাওয়াত থাকলো,গেলামও ঠিক, যাওয়ার পর দেখলাম একটা বাড়িতে আরো অনেকজন ছাত্র, কিছুক্ষণ পর মাদ্রাসার একজন শিক্ষক আসলো,যাকে আমি আগে থেকেই চিনি,তবে সেটা ভালো হিসেবে নয়,আমি জানতাম যে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকরা কিছুই জানে না। কিছুক্ষণ পর প্রোগ্রাম শুরু হলো কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে, তারপর ইসলামী সংগীত, এমন শুরুটা আমার কাছে দারুন লেগেছে,তখনও আমি জানতাম না এটা কিসের প্রোগ্রাম, তবে আমার কাছে অনেক ভালো লাগছিলো। একটুপর আমি বুজতে পারলাম এটা হলো শিবিরের প্রোগ্রাম, এটা ছিলো কুরআন তালিমের প্রোগ্রাম।

সবাই একে একে কোরআন পড়ছে আর সবাই শুনছে, ভুল হলে শিখিয়ে দিচ্ছে, এটাও আমাকে দারুণ অভিভূত করেছে,শেষে হুজুর সূরা আছর থেকে আলোচনা করলেন, আমার বহুদিনের একটা ভুল দুর হলো,আলিয়া মাদ্রাসার হুজুররা কিছু জানে না, এই ভুলটা ভেঙে গেলো। আমার কাছে মনে হলো, এমন আলোচনা আমি আগে কখনো শুনি নাই। প্রোগ্রাম শেষ হলে ফারুক ভাই আমাকে জিগ্যেস করলো,কেমন লেগেছে আপনার কাছে আমাদের প্রোগ্রাম,আমি বললাম খুব ভালো, এমন প্রোগ্রাম যখন হবে আমাকে ডাকবেন।

সেদিন ফারুক ভাই আমাকে একটি সমর্থক ফরম দিয়ে বললেন এটা পূরণ করুন। আমিও পূরণ করলাম,একটা রিপোর্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, এখানে আপনার প্রতিদিনের রিপোর্ট লিখে রাখবেন, আমি এক সাপ্তাহ পর চেক দিবো। আমি বাসায় এসে সেটা রেখে দিলাম, পূরণ করলাম না, এক সপ্তাহ পর ফারুক ভাই এসে দেখলো আমি একদিনেরও রিপোর্ট রাখি নাই। ফারুক ভাই অনেক কষ্ট পেলো।

কিন্তু আমার যে তার কাছে অনেক প্রশ্ন ছিলো। তারপর আমি তাকে একে একে আমার মনে এতোদিন থেকে জেকে থাকা প্রশ্ন করা শুরু করি, তিনি প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিলেন, এবং বললেন, এর চেয়েও ভালো উত্তর পাবেন, আপনি আমার সাথে একদিন যাবেন, তবে সেখানে যেতে হলে আপনাকে এক মাসের রিপোর্ট রাখতে হবে, তারপর কোনমতে এক মাসের রিপোর্ট রাখলাম।

শেষে কন্টাকে গেলাম,আমি আগে থেকে কিছুই পড়ে যাই নি, তাই ফারুক ভাই সেখানে আমাকে প্রাথমিক কিছুটা শিখালেন। কন্টাক নিলেন, কোরআন হাদিস থেকে,আমি কিছুটা পারছি,আর কিছুটা পারি নাই,আমার কাছে অবাক লাগলো যে পেন্ট শার্ট পড়া, এই কলেজের ছেলেগুলো কত সুন্দর করে কোরআন হাদিসের কথা বলছে। তারপর ফারুক ভাই এসে বলল,ভাই ওনার কিছু অভিযোগ আছে,আমি একে একে অভিযোগ গুলো বললাম।

আমি আমার অভিযোগের অনেকটা সমাধান পেয়ে গেলাম। এবং সেদিন থেকে শিবিরকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতে লাগলাম। সেদিন আর আমি কর্মী হতে পারিনি, আমাকে আবারো ১৫দিনপর ভালো করে পড়ে যেতে বলা হলো,এবার আমি নিজের উদ্যেগে পড়তে লাগলাম,নিজের উদ্যেগে কন্টাক দিয়ে কর্মী হলাম। আজও এই সংগঠনকে ভালোবাসি মনেপ্রাণে। একান্ত ধন্যবাদ জানাই ফারুক ভাইকে। যদি তিনি আমার পিছনে শ্রম না দিতেন,তাহলে হয়তো আমি এখনো অন্ধকারেই ডুবে থাকতাম। আলোরদিশা কখনো খুজে পেতাম না। আল্লাহ ফারুক ভাই এই কল্যাণের জন্য জাজা দান করুণ।